বর্তমান যুগে হার্ট অ্যাটাক এমন এক ভয়ংকর স্বাস্থ্যসমস্যা, যা কাউকেও ছাড়ছে না।
আগে এটি কেবল বয়স্কদের রোগ হিসেবে ধরা হতো, কিন্তু এখন তরুণরাও আকস্মিকভাবে
আক্রান্ত হচ্ছে। জীবনযাত্রার ধরণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, শারীরিক
পরিশ্রমের অভাব—এসব হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার
মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। অনেক সময় হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাণ হারায়,
কারণ আমরা জানি না প্রাথমিক করণীয় কী। অথচ সময়মতো কিছু পদক্ষেপ নিলে জীবন বাঁচানো
সম্ভব।
হার্ট অ্যাটাক একেবারেই হঠাৎ হয় না। শরীর আগে থেকেই কিছু সংকেত দেয়। বুকের
ব্যথা,ক্লান্তি,শ্বাসকষ্ট—এসব উপসর্গকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে আগেভাগেই
ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।এই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে সঠিক তথ্য, সহজ ভাষা এবং ধাপে
ধাপে গাইডের মাধ্যমে। এখানেআমরা জানব, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে কী করতে হবে, কী
করা যাবে না, এবং ভবিষ্যতে ঝুঁকি কমানোরউপায়।প্রতিটি মানুষ তার জীবনের
দায়িত্বপ্রাপ্ত। নিজের ও পরিবারের হৃদয়ের যত্ন নেওয়া মানেই জীবন রক্ষা করা।
সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপই হতে পারে প্রাণ বাঁচানোর চাবিকাঠি।
পেজ সূচিপত্রঃ হৃদরোগ – আধুনিক জীবনের নীরব ঘাতক
হার্ট অ্যাটাক কী এবং কেন হয়
হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী
ধমনীগুলোর কোনো একটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ধমনীর ভেতরে “প্লাক” জমে ধমনী সংকুচিত
হয়, যা বছর ধরে তৈরি হয়।
যদি এই প্লাক হঠাৎ ফেটে যায়, রক্ত জমাট বাঁধে এবং পুরো রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
তখন হার্টের পেশিগুলো অক্সিজেন না পেয়ে মারা শুরু করে। চিকিৎসা না করলে স্থায়ী
ক্ষতি বা মৃত্যু হতে পারে।
ধূমপান, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, মানসিক চাপ—এসব হার্ট অ্যাটাকের
প্রধান ঝুঁকি উপাদান। আধুনিক জীবনযাত্রা, ফাস্টফুড এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এই
ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বয়স বাড়লেও হার্ট অ্যাটাক হয়—এটি ভুল ধারণা। এখন ২৫–৩০ বছরের তরুণরাও আক্রান্ত
হচ্ছে। কারণ, তরুণদের জীবনধারা চাপপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর।ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত
স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, মানসিক প্রশান্তি এবং ব্যায়াম অপরিহার্য।
সচেতনতা হল হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের প্রথম ধাপ।
হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাক সাধারণত হঠাৎ ঘটে না। শরীর আগে থেকেই সংকেত দেয়। সবচেয়ে সাধারণ
লক্ষণ হলো বুকের মাঝখানে তীব্র চাপ বা ব্যথা, যা বাম হাতে, ঘাড়ে, চোয়ালে ছড়িয়ে
যেতে পারে।শ্বাস নিতে কষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, বমি ভাব, মাথা ঘোরা, এবং অস্বাভাবিক
ক্লান্তি—এসবও উপসর্গ হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে। তারা
অনেক সময় শুধু অস্বস্তি, বমি ভাব বা ক্লান্তি অনুভব করে।যারা উচ্চ রক্তচাপ,
ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল সমস্যায় ভুগছে, তাদের জন্য সতর্কতা আরও জরুরি। দ্রুত
শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা শুরু করা জীবন বাঁচাতে পারে।প্রতিটি মিনিট মূল্যবান। সময়
নষ্ট করলে হার্টের ক্ষতি অল্প সময়ে স্থায়ী হয়ে যায়। তাই উপসর্গ দেখা মাত্রই
ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।প্রাথমিক লক্ষণ চেনার মাধ্যমে হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছানো এবং
সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। সচেতনতা এখানে জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি।
হার্ট অ্যাটাকের সময় প্রথম মিনিটের গুরুত্ব
হার্ট অ্যাটাকের সময় প্রথম কয়েক মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে সঠিক
পদক্ষেপ নিলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।প্রথমে রোগীকে শান্ত রাখতে হবে। আতঙ্ক
হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। রোগীকে বসানো বা আধা শোয়ানো অবস্থায় রাখলে শ্বাস
নেওয়া সহজ হয় এবং রক্তচাপ স্থিতিশীল থাকে।যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় জরুরি সেবায় ফোন
করা উচিত। নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।রোগী সচেতন থাকলে
ডাক্তার অনুমতি দিয়ে একটি এসপিরিন ট্যাবলেট চিবিয়ে খেতে দেওয়া যেতে পারে, যা রক্ত
জমাট বাঁধা কমাতে সাহায্য করে।নিরবচ্ছিন্নভাবে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও নাড়ি
পর্যবেক্ষণ করো। পাশে বসে সাহস যোগানো অত্যন্ত জরুরি ।
রোগীকে সাহায্য করার করণীয় ধাপগুলো
হার্ট অ্যাটাকের সময় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া মানেই জীবনের সময় বাড়িয়ে দেওয়া। অনেক সময়
কয়েক মিনিটের দেরি বড় ক্ষতির কারণ হয়। তাই কেউ হঠাৎ বুকে ব্যথা, ঘাম, বা
শ্বাসকষ্টে ভুগলে তাকে শান্ত থাকতে সাহায্য করুন এবং নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
প্রথমেই নিজেকে শান্ত রাখুন এবং রোগীকেও শান্ত থাকতে বলুন। ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টি
করবেন না। অনেক সময় রোগী ভয় পেয়ে যায়, এতে হার্টের চাপ আরও বেড়ে যায়। আশেপাশের
মানুষকে বলুন যেন অযথা হৈচৈ না করে।এরপর সঙ্গে সঙ্গে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা
ডাকুন। বাংলাদেশে হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিন, অথবা কাছের হাসপাতাল বা ক্লিনিকে
দ্রুত খবর দিন। অ্যাম্বুলেন্স আসা পর্যন্ত রোগীকে একা ছেড়ে যাবেন না, পাশে
থাকুন এবং তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন।রোগীকে এমনভাবে বসান যেন তার বুক ও মাথা
একটু উঁচু থাকে, এতে শ্বাস নিতে সহজ হয়। খুব টাইট জামা বা বোতাম খুলে দিন,
বেল্ট বা টাই থাকলে খুলে ফেলুন। আশেপাশের পরিবেশ ঠান্ডা ও শান্ত রাখুন, কারণ
অতিরিক্ত গরম বা ভিড় তার অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে।
যদি রোগী অচেতন হয়ে পড়ে, দেখুন সে শ্বাস নিচ্ছে কি না এবং তার নাড়ি স্পন্দন
আছে কি না। যদি শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, সাথে সাথে CPR শুরু করুন — বুকের মাঝখানে
দুই হাত রেখে প্রতি মিনিটে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ বার জোরে চাপ দিন। যদি আপনি CPR
করতে না জানেন, ফোনে জরুরি হেল্পলাইন থেকে নির্দেশনা নিতে পারেন।যদি রোগীর আগের
প্রেসক্রিপশনে অ্যাসপিরিন বা নাইট্রোগ্লিসারিন থাকে, তাহলে সেটি খেতে দিন। তবে
নতুন করে নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ দেবেন না, কারণ ভুল ওষুধ দিলে বিপদ আরও বাড়তে
পারে।রোগী যদি বমি বা কাশি করে, তাহলে তার মাথা এক পাশের দিকে ঘুরিয়ে দিন যাতে
শ্বাসনালী বন্ধ না হয়। মুখে পানি, ওষুধ বা কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না, এতে
শ্বাসরোধ হতে পারে।অ্যাম্বুলেন্স এলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠান। সাথে নিয়ে
যান তার আগের চিকিৎসার কাগজপত্র ও ব্যবহৃত ওষুধের নাম। চিকিৎসককে জানিয়ে দিন
কখন থেকে সমস্যা শুরু হয়েছে এবং কী কী উপসর্গ দেখা গেছে।এই ধাপগুলো মনে রাখলে
আপনি শুধু একজন মানুষকে সাহায্যই করবেন না, বরং তার জীবনও বাঁচাতে পারবেন।
হার্ট অ্যাটাকের সময় CPR বা বুক চাপা দেওয়ার নিয়ম
রোগী শ্বাস না নিলে বা নাড়ি না থাকলে অবিলম্বে CPR শুরু করতে হবে। রোগীকে শক্ত
সমতল জায়গায় শুইয়ে দুই হাত দিয়ে বুকের মাঝখানে চাপ দিতে হবে।প্রতি মিনিটে
১০০–১২০ বার বুক চাপা প্রয়োজন। চাপের সময় বুক প্রায় ২ ইঞ্চি নিচে নামাতে
হবে, কিন্তু পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে যেন বুক উঠতে পারে।যদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
কেউ মুখে শ্বাস দিতে জানে, তবে ৩০ বার বুক চাপার পর ২ বার মুখে শ্বাস দেওয়া
যায়।CPR চলবে যতক্ষণ না রোগী স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেয় বা এম্বুলেন্স/চিকিৎসক
এসে রোগীকে গ্রহণ করে।ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি যে হাত ব্যবহার করছো, সেটাই
রোগীর জীবনের শেষ ভরসা হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক একরাশি জটিল মেডিক্যাল টার্ম নয় — এটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনের
সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি বাস্তব বিপদ। এই আর্টিকেলের প্রতিটি অংশ ঠিক সেই
মুলনীতিকে ঘিরে লেখা হয়েছে: জ্ঞান যদি না থাকে, তখনই মানুষ হেরে যায়; কিন্তু সঠিক
জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ থাকলে সপ্তাহের সেই এক‑দু’টি মুহূর্তে তুমি বা তোমার পাশে থাকা
কেউ জীবন বাঁচাতে পারবে। হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ভীত হওয়া দরকার নেই, তবে অবহেলা করাও
সমান বিপজ্জনক।
সচেতনতা মানে কেবল উপসর্গ চিনে নেওয়া নয়—এটা হলো পূর্বপ্রস্তুতি, পরিবারের সাথে
পরিকল্পনা, জরুরি কনট্যাক্ট এবং মৌলিক প্রাণরক্ষা কৌশল জেনে রাখা। যদি আমরা
ব্যক্তিগতভাবে ও সামূহিকভাবে এই জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিই, তাহলে হাজারো অনিরাপদ
মুহূর্তকে নিরাপদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।সচেতনতা মানে কেবল উপসর্গ চিনে নেওয়া
নয়—এটা হলো পূর্বপ্রস্তুতি, পরিবারের সাথে পরিকল্পনা, জরুরি কনট্যাক্ট এবং মৌলিক
প্রাণরক্ষা কৌশল জেনে রাখা। যদি আমরা ব্যক্তিগতভাবে ওসাময়িকভাবেএই জিনিসগুলোকে
গুরুত্ব দিই, তাহলে হাজারো অনিরাপদ মুহূর্তকে নিরাপদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
হাসপাতালে নেওয়ার আগে জরুরি ব্যবস্থা
রোগীকে এম্বুলেন্সে ওঠানোর সময় মাথা কিছুটা উঁচুতে রাখো। এতে শ্বাস নেওয়া সহজ হয়।
অক্সিজেন যদি থাকে, তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।
রোগীর হার্টবিট, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করো।কোনো
অবস্থাতেই রোগীকে হালকা হাঁটাতে বা নড়াচড়া করাতে যাবে না।যত দ্রুত সম্ভব
হাসপাতালে পৌঁছানোই মূল লক্ষ্য। সময় নষ্ট করলে হার্টের ক্ষতি স্থায়ী হয়ে যেতে
পারে।
হাসপাতালে নেওয়ার আগে জরুরি ব্যবস্থা রোগীকে এম্বুলেন্সে ওঠানোর সময় মাথা কিছুটা
উঁচুতে রাখো। এতে শ্বাস নেওয়া সহজ হয়।অক্সিজেন যদি থাকে, তা ব্যবহার করা যেতে
পারে। এটি রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।রোগীর হার্টবিট, রক্তচাপ এবং
শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করো।কোনোঅবস্থাতেই রোগীকে হালকা হাঁটাতে বা
নড়াচড়া করাতে যাবে না।যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছানোই মূল লক্ষ্য। সময় নষ্ট
করলে হার্টের ক্ষতি স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসকের ভূমিকা
হাসপাতালে পৌঁছালে প্রথমে ECG করা হয়। এটি হার্টের বিদ্যুৎ সংকেত দেখিয়ে ব্লকের
সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করে।রক্ত পরীক্ষা ও অন্যান্য স্ক্যানের মাধ্যমে হার্ট
অ্যাটাক নিশ্চিত করা হয়।
প্রয়োজনে রক্ত পাতলা করার ওষুধ বা ইনজেকশন দেওয়া হয়।হার্টে ব্লক থাকলে স্টেন্ট
বসানো বা বাইপাস সার্জারি করা হয়।যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়, রোগীর জীবন বাঁচানোর
সম্ভাবনা তত বেশি।
হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর যত্ন ও পর্যবেক্ষণ
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।খাবারে লবণ
ও চর্বি কমাতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।চিকিৎসকের দেওয়া
ওষুধ সময়মতো খেতে হবে। কখনো ছেড়ে দেওয়া যাবে না।হালকা ব্যায়াম, দৈনিক হাঁটা এবং
পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থতায় সহায়তা করে।পরিবারের সমর্থন ও ইতিবাচক মানসিকতা রোগীর
দ্রুত সুস্থতায় সহায়তা করে।
যদি আমরা ব্যক্তিগতভাবে ও সামূহিকভাবে এই জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিই, তাহলে হাজারো
অনিরাপদ মুহূর্তকে নিরাপদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।তাজা শাকসবজি,
ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।চর্বিযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা
জরুরি।প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটা অভ্যাস করতে হবে।মানসিক চাপ
নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য।হার্ট অ্যাটাক
সাধারণত হঠাৎ করে হয় না—এর পেছনে থাকে দীর্ঘদিনের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও অনিয়ম।
কিছু সচেতন অভ্যাস গড়ে তুললে ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো
সম্ভব।
জীবনযাপনে পরিবর্তনঃ
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা হালকা জগিং করুন।
সুষম খাদ্যগ্রহণ: তেলে-চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ খান।
ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন: এগুলো হার্টের রক্তনালীর ক্ষতি করে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ
বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন।
যদি পরিবারের কারও হার্টের সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নিন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ
মানসিক চাপ হার্টের বড় শত্রু। মেডিটেশন, পর্যাপ্ত ঘুম ও প্রিয় কাজে সময় দিন।
জরুরি অবস্থায় সচেতনতাঃ
বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম বা হাতব্যথা অনুভব করলে দেরি না করে নিকটস্থ
হাসপাতালে যান।
উপসংহার: জীবন বাঁচাতে সচেতনতার বিকল্প নেই
হার্ট অ্যাটাক একরাশি জটিল মেডিক্যাল টার্ম নয় — এটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনের
সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি বাস্তব বিপদ। এই আর্টিকেলের প্রতিটি অংশ ঠিক সেই
মুলনীতিকে ঘিরে লেখা হয়েছে: জ্ঞান যদি না থাকে, তখনই মানুষ হেরে যায়; কিন্তু সঠিক
জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ থাকলে সপ্তাহের সেই এক‑দু’টি মুহূর্তে তুমি বা তোমার পাশে থাকা
কেউ জীবন বাঁচাতে পারবে। হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ভীত হওয়া দরকার নেই, তবে অবহেলা করাও
সমান বিপজ্জনক। সচেতনতা মানে কেবল উপসর্গ চিনে নেওয়া নয়—এটা হলো পূর্বপ্রস্তুতি,
পরিবারের সাথে পরিকল্পনা, জরুরি কনট্যাক্ট এবং মৌলিক প্রাণরক্ষা কৌশল জেনে রাখা।
যদি আমরা ব্যক্তিগতভাবে ও সামূহিকভাবে এই জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিই, তাহলে হাজারো
অনিরাপদ মুহূর্তকে নিরাপদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত সরল কিন্তু ফলপ্রসূ: লক্ষণগুলোকে হালকাভাবে না
নেয়া, প্রথম মিনিটগুলোতে শান্ত থাকা, দ্রুত জরুরি সেবা কল করা, এবং যদি প্রয়োজন
হয় তাহলে অবিলম্বে CPR শুরু করা—এইগুলোই সবচেয়ে বড় ভিন্নতা করতে পারে। হাসপাতালের
চিকিৎসা, স্টেন্ট বা বাইপাস—এসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অক্সিজেন ও
রক্তপ্রবাহ রক্ষায় পরিবারের করা তাত্ক্ষণিক সহায়তার বিকল্প নেই। তাই প্রত্যেক
পরিবারের একজন বা আরো দু’জন সদস্যকে CPR‑এর মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া খুব জরুরি; একই
সাথে বাড়িতে বা অফিসে অ্যাম্বুলেন্স নম্বর, নিকটস্থ হাসপাতালের ঠিকানা, এবং
রিকভারি ফোন/ইমেইল আপ‑টু‑ডেট রাখা প্রয়োজন। এই প্রস্তুতিগুলো যুদ্ধের অস্ত্র বলে
ভাবো—যে যুদ্ধটা একদিন ঘটা করে আসতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ হলো জীবনধারার পরিবর্তন। ওজন নিয়ন্ত্রণ, সুষম
খাদ্য, ধূমপান ত্যাগ, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক চাপ কমানোর অভ্যাস—এসব মিলিয়ে
হার্টকে দীর্ঘ সময় সুস্থ রাখা যায়। মেডিক্যাল চেক-আপ কখনো অবহেলা করা যাবে না।
রুটিনমাফিক রক্তচাপ, ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করলে হার্ট অ্যাটাকের
ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।যারা প্রথমবার হার্ট অ্যাটাক পার করেছেন, তাদের জন্য
পুনরুদ্ধার মানে শুধুই শারীরিক নয়—মানসিক পুনর্গঠনও সমান গুরুত্বপূর্ণ।পরিবারের
সহায়তা, থেরাপি, এবং ধীরে ধীরে ব্যায়ামে ফিরে আসা প্রতিটি ধাপই প্রয়োজনীয়।মনে
রাখুন—প্রতিরোধে যতটা সময় ও যত্ন ব্যয় করবেন, ভবিষ্যতে তত কম কষ্ট ও খরচ হবে।
সবশেষে বলি — দায়িত্ব ব্যক্তিগত এবং সামাজিক দুটোই। তুমি নিজের যত্ন নেবে, পরিবার
সচেতন হবে, আর সমাজে মৌলিক স্বাস্থ্যশিক্ষা ছড়িয়ে গেলে অনেক জীবন রক্ষা করা
সম্ভব। হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ভয়কে জ্ঞান ও প্রস্তুতিতে বদলে দিয়ো; আজই CPR শিখো,
আজই রিকভারি নম্বর আপডেট করো, আজই ঘরের বড়দের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বলো। তুমি
যদি একদিন ঠাণ্ডা মাথায় সঠিক কাজটা করে ফেলো, সেটা কারো জন্য দ্বিতীয় জীবন হয়ে
উঠতে পারে। সচেতন হও, প্রস্তুত থাকো — কারণ এক মিনিটের সঠিক কাজ এক জীবনের অধিকার
ফিরিয়ে দিতে পারে।
"দয়া করে সবসময় সুন্দর ভাষায় কমেন্ট করুন। সুইট ডায়েরি বিডির নীতিমালা মেনে চলুন। 🌷"
comment url